গাজীপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার মাসুম বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্য অভিযোগ উঠেছে

গাজীপুর প্রতিনিধি মিলন
প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ । ১১:৫৩ অপরাহ্ণ

 

প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের চিত্র গাজিপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সর্বত্র। এ যেন ঘুষের স্বর্গরাজ্য। কোনো রাখঢাক নেই। ঘাটে ঘাটে বাঁধা ঘুষের রেট। মুখে মুখে ঘুরছে ফর্দ। ঘুষের কারবার চলছে অনেকটা সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো। দিনশেষে ঘুষের টাকা বণ্টনে চালু আছে অটোপদ্ধতি। অর্থাৎ নির্বিঘ্নে নির্ধারিত কমিশন পৌঁছে যায় সংশ্লিষ্টদের টেবিলে। আর এসব ঘুষ লেনদেনের প্রধান হলেন অফিস সহকারী (কেরানি) নিরঞ্জন চন্দ্র ধর।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই অফিসে মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো জমির রেজিস্ট্রি হয় না। দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন নেতা, দালাল সিন্ডিকেট ও সাব-রেজিস্ট্রারের কথিত সহকারীর আমিনুল ইসলাম  মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। এসব টাকা থেকে একটি অংশ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করতে খরচ হলেও অধিকাংশই নিজের কাছে তুলে নেন অফিস সহকারী নিরঞ্জন চন্দ্র ধর।

অভিযোগ রয়েছে, অফিসে আসা সাধারণ মানুষদের নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। “কাগজে সমস্যা আছে” বলে ভয় দেখিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের উৎকোচ। জমির সব কাগজ ঠিকঠাক থাকলেও ‘ফ্রেশ জমি’কে ‘ডোবা’, ‘নালা’ বা ‘পতিত’ হিসেবে দেখিয়ে নেয়া হয় বাড়তি ঘুষ। সরকারি নির্ধারিত ফি’র বাইরে দলিলপ্রতি  সহকারী নিরঞ্জন চন্দ্র ধরের মাধ্যমে আদায় করা হয় অতিরিক্ত অর্থ। এসব টাকা ‘নাস্তা খরচ’, ‘ম্যানেজ ফি’ বা ‘সহযোগিতা’র নামে নিয়মিতভাবে তোলা হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, এই ঘুষ বাণিজ্য শুধু সাব-রেজিস্ট্রারের একক প্রচেষ্টায় চলছে না। এতে জড়িত রয়েছে অফিসের ক্লার্ক, মোহরার, টিসি মোহরার ও অন্যান্য কর্মচারীরাও। কেউ ঘুষ দিতে রাজি না হলে তার কাজ আটকে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে,  অফিস সহকারী নিরঞ্জন চন্দ্র ধর নিয়মিত দম্ভভরে বলেন, তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারবে না, কারণ তিনি “সব জায়গাতেই সিস্টেম করে” রেখেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, তিনি প্রতিমাসে গড়ে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষের টাকা আদায় করেন। কোনো কোনো দিন এই অঙ্ক ৮ থেকে ১০ লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। এসব অবৈধ উপার্জনের একটি অংশ নিয়মিতভাবে ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের দেওয়া হয় যাতে কেউ প্রশ্ন না তোলে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, নিরঞ্জন চন্দ্র ধর একই  অফিসে চাকরি করছেন ২০১৯ সাল থেকে, গাজিপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে
পোস্টিং নিয়ে থাকতে জেলা রেজিস্ট্রার কে মোট অঙ্কের ঘুষ নিয়মিত দেন বলে নারায়ণ দাস প্রকাশ্যে বলে বেড়ান।

সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগী ও দলিল লেখকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  জানান, প্রতিটি দলিলের ক্ষেত্রে প্রত্যেক গ্রাহককে উৎস কর ২ শতাংশ, স্ট্যাম্প দেড় শতাংশ, রেজিস্ট্রি বাবদ ১ শতাংশ ও স্থানীয় কর হিসাবে ৩ শতাংশ ব্যাংক চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। এর বাইরে প্রতিটি দলিলে নগদ এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা, সামান্য ভুলের জন্য আরও বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়ে থাকে।

সমিতির ফি নামে প্রত্যেক দলিলে ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। প্রতিদিন ৫০-৬০টি দলিল এই অফিসে রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। আর অফিস সহকারী নিরঞ্জন চন্দ্র ধর এই চাঁদা আদায় করে ভাগ পান ১০ হাজার টাকা। কমিশন দলিলে সাব-রেজিস্ট্রারকে ভাঙিয়ে সরকারি ফির অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন তিনি। হেবা ঘোষণা দলিলে প্রতি লাখে ৪০০ টাকা ও সেরেস্তা ফি প্রতি লাখে ৩-৪ টাকা করে নিয়ে থাকেন নিরঞ্জন চন্দ্র ধর। আর এ টাকা অফিসের অন্যদের ও দলিল লেখকদের মধ্যে ভাগ হয়। অতিরিক্ত অর্থের ঘুষের টাকা থেকে অফিস সহকারী ৩০ ভাগ পেয়ে থাকেন বলে জানা গেছে।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিরঞ্জন চন্দ্র ধর বলেন, ‘আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এখানে বদলি হয়ে এসেছি। এদিক-সেদিক না করলে চলবে কীভাবে।’

এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিদিন অফিস শেষে অফিস সহকারী নিরঞ্জন চন্দ্র ধর  ঘুষের টাকা নিয়ে বাসায় ফেরেন। এই সময় দুর্নীতি দমন কমিশন গোপনে অভিযান চালালে তাকে হাতেনাতে ধরা সম্ভব। সচেতন মহল মনে করছে, তার অনৈতিক কার্যকলাপ রেজিস্ট্রেশন বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, একইসাথে অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গাজীপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার মোঃ  মাসুম  নেতৃত্বে  অফিস সহকারী নিরঞ্জন চন্দ্র ধর ও মোহরার  গাজী উম্মে আসমা   বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।  এ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে যোগদানের পর থেকে সাব রেজিস্ট্রার মাসুম  তিনি এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলিল লিখকরা।

তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। অভিযোগ আছে, সকল প্রকার দলিলে খাজনা, নামজারি, ডিসিআর ছাড়া দলিল নিবন্ধন করেন না। এছাড়াও তিনি সময়ক্ষেপণ করে দলিল নিবন্ধন করায় বিকেল তিনটার পর প্রতি দলিলে অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে থাকেন। এ অনিয়মের সহযোগিতা করেন সাব রেজিস্ট্রার  অফিসের মোহরার

 গাজী উম্মে আসমা ও অফিস সহকারী  নিরঞ্জন চন্দ্র ধর জানা যায়, গাজীপুর সদর   সাব রেজিষ্টার মাসুম    বদলি হয়ে আসার  পর থেকে এ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে  কয়েকদিনের দলিল জমে থাকার কারণে দলিল নিবন্ধন সংখ্যা দীর্ঘ হয়। তিনি দায়িত্ব পালনের প্রথম দিনেই দালালদের  সহযোগিতায় দলিল নিবন্ধন করেন। বিশৃঙ্খলা এড়ানোর অজুহাত দেওয়া হলেও দলিল লিখকদের দাবি তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য দালাল এর  সহযোগিতা নিয়েছেন। তিনি তিনটার পর কোন দলিল না করার ভয় দেখান। তিনি তার অফিসের অফিস সহকারী

নিরঞ্জন চন্দ্র ধর ও মোহরার  গাজী উম্মে আসমা

  মাধ্যমে প্রতি দলিলে ১০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করে রাত ১০টা পর্যন্ত দলিল নিবন্ধন করেন।
সাব রেজিস্ট্রারের এসব কর্মকান্ডে দলিল লিখক থেকে শুরু করে দলিল দাতা ও গ্রহিতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিলের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। ফলে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ মোতাবেক আরএস রেকর্ড মূলে মালিক হলে দলিল নিবন্ধনে কোন খাজনা, নামজারি ও ডিসিআর লাগবে না। দলিল মূলে মালিক হলে শুধুমাত্র ডিসিআর ও নামজারি জমা ভাগ লাগবে। আমমোক্তার, বিনিময়, বন্টন, দানের ঘোষনা, হেবা ঘোষনা, বিলওয়াজ হেবা, অছিয়ত, ভুল সংশোধন, ঘোষনা পত্র, না দাবি ক্ষেত্রে খাজনা, নামজারি ও ডিসিআর লাগবে দলিল নিবন্ধনে এমন কোন অধ্যাদেশ জারি হয়নি। সাব রেজিস্ট্রার  মাসুম  দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি নিজের মনগড়া আইন তৈরি করে দলিল লিখক, দাতা ও গ্রহিতাকে চাপিয়ে দিয়েছেন। সাব রেজিস্ট্রারের নিয়ম মতো কোন দলিল না হলেই তিনি দলিল নিবন্ধনে তালবাহানা শুরু করেন। তার দাবিকৃত টাকা কেরানী ও নকল নবিশ  কাছে জমা করার পর পেন্সিলের মাধ্যমে নাম্বার সংকেত দিলেই তিনি দলিল নিবন্ধন করেন। এতে করে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে দলিল লিখক, দাতা ও গ্রহিতারা।
আমির হোসেন নামের এক ব্যাক্তি জানান, ১৭ কোটি টাকার একটি বন্ধকী দলিল নিবন্ধন করতে সাব রেজিস্ট্রার সরকারী ফি বাদে

নিরঞ্জন চন্দ্র ধর মাধ্যমে অতিরিক্ত এক লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। মানিক মিয়া নামের এক ব্যক্তির অভিযোগ, বায়নারত দলিল বাতিল করার জন্য এক সপ্তাহ ঘুরিয়ে অবশেষে ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে দলিল নিবন্ধন করেন সাব রেজিস্ট্রার  মাসুম

দলিল লিখক  বলেন, সাব রেজিস্ট্রার দায়িত্ব পালন করতে এসে আরও বেশি হয়রানী করছে। তার সংকেত ছাড়া কোন দলিল নিবন্ধন হয় না। সরকারী আইনের কোন তোয়াক্কা না করে তিনি তার মনগড়া আইন তৈরি করে হয়রানী করছেন।
দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক  কাছে সাব রেজিস্ট্রারের অনিয়ম ও উৎকোচের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সাব রেজিস্ট্রার সকল দলিলে এমন করেন না। তবে কিছু কিছু দলিলে এমন সমস্যা সৃষ্টি করেন। সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কেরানী বলেন, আমি শুধু সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে স্যারের কাছে দলিল পাঠিয়ে দেই। ঘুষের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
গাজীপুর সদর   সাব রেজিস্ট্রার  দায়িত্ব মাসুম   অভিযোগ অস্বীকার করে   সকালে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে সরাসরি কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানান  বিস্তারিত আসছে দ্বিতীয় পর্ব
Editor and Publisher Rajib Khan Executive Editor Arash Khan News Editor Monirul Islam Active Editor Jibon Islam Chief Advisor Barrister Amirul Islam Office address Published from Skyview Trade Valley, 14th Floor, 66 V.I.P Road, Nayapaltan, Dhaka-1000 and printed from Shariatpur Printing Press, 28/B, Toynbee Circular Road, Motijheel, Dhaka. Email dainikamarsadhinbangladesh@gmail.com

প্রিন্ট করুন