প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার নয়ন মিয়া
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ । ১১:৫৬ অপরাহ্ণ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের ভোটদানের জন্য চালু হয়েছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘পোস্টাল ভোট বিডি’। যার মাধ্যমে প্রবাসীদের পাশাপাশি নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। আগামীকাল বুধবার থেকেই অ্যাপটি থেকে ভোটদানের নিবন্ধন শুরু করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ভোটাররা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন মিলনায়তনে অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। এ সময় নমুনা হিসেবে মিশর, জাপান, আরব আমিরাত, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস থেকে একজন করে প্রবাসীর নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়।

অ্যাপ উদ্বোধন করে সিইসি বলেন, পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন। বাংলাদেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা ইতিহাস সৃষ্টি করলো। এতদিন প্রবাসীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। আজ সেই বঞ্চনা দূর হলো। প্রবাসী ভোটাররা গণতন্ত্র এবং সুশাসনের জন্য সেতু বন্ধন তৈরি করবেন।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসী নাগরিকরা যেমন অর্থনৈতিক নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখছে, এমনভাবে গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখাও কর্তব্য। তাদের ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি হবে আরও বিস্তৃত, প্রতিনিধিত্বশীল এবং আরও শক্তিশালী।

বাংলাদেশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ইসি সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ বিদেশে বসবাস করছেন এবং বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। এতদিন বিদেশে থাকা নাগরিকরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আজকের এই উদ্যোগ সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাচ্ছে।

পোস্টাল ভোট বৈশ্বিক গণতন্ত্রের দরজা খুলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশেও যাতে পোস্টাল ভোট কাভার করা যায়, সেটাও করেছি। কোনো নাগরিক যাতে ভোটাধিকার বঞ্চিত না হয়, সে ব্যাপারেও এটা কাজ করবে

নাসির উদ্দিন বলেন, তিনমাসের মধ্যে এই দুঃসাহসিক কাজ সম্পন্ন করেছে ইসি। বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞ সায় না দিলেও কমিশন সাহস নিয়ে এগিয়ে যায়। এটাকে দুঃসাহসী বলে অভিহিত করতে চাই। এটা দুঃসাধ্যের মতো বিষয় ছিল।

অ্যাপটি নিয়ে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে তিনি বলেন, এটা নিয়ে বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই অ্যাপে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তারপরও সাইবার অ্যাটাক বড় চ্যালেঞ্জ, নিরাপত্তার ঝুঁকিটাও রয়ে গেছে। শনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জও আছে, এখানে যতগুলো দেশে প্রবাসী থাকেন ততগুলো দেশের ডাকবিভাগ সম্পৃক্ত। অ্যাপ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা একটা চ্যালেঞ্জ। তবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই ইসি ধীরে ও ধারাবাহিতা রেখে এগিয়ে যাচ্ছে।

অ্যাপের নিবন্ধন নমুনা দেখতে নিজের কানাডা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই অ্যাপকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে সবার সহযোগিতা দরকার। ১৫০ এর বেশি দেশ এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ অ্যাপটির ভোটিং পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয় ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন।

স্বাগত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে এই অ্যাপে নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার বিষয়ে সবার সহযোগিতা চান।

ইসির অতিরিক্ত সচিব ও অ্যাপটির প্রকল্প পরিচালক কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রোখেন প্রকল্পের টিম লিডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালীম আহমাদ খান। এ সময় ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে অ্যাপটির নিবন্ধন ও পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়।

যেভাবে নিবন্ধন ও ভোটদান 

‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচদিন করে নিবন্ধনের সময় বেঁধে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবাসীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।

এছাড়া দেশের ভেতর তিন ধরনের ব্যক্তিকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, নিজ ভোটার এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা এই আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। ভোট দিতে আগ্রহীদের নিবন্ধন করতে হবে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে। এ সময় বাদ পড়া প্রবাসীরাও নিবন্ধন করতে পারবেন।

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য প্রবাসীদের গুগল প্লে স্টোর বা আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে ‘Postal Vote BD’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এরপর লগইন করে অ্যাকাউন্ট তৈরির সময় মোবাইল নম্বর দিতে হবে। মোবাইল নম্বরে আসা ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নম্বর নিশ্চিত করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে নিয়ে সেলফি তোলা এবং আলাদাভাবে এনআইডির ছবি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পাসপোর্ট থাকলে তার ছবিও দিতে হবে। সবশেষে বিদেশে বর্তমান ঠিকানার তথ্য দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সিস্টেম থেকে তথ্য যাচাই শেষে অ্যাপে ‘আপনি এখন নিবন্ধিত’ বার্তা দেখা যাবে। এরপর অপেক্ষা থাকবে কেবল ব্যালট পেপারের জন্য।

এতে আরও বলা হয়, নিবন্ধন শেষে তথ্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাবে। তাদের মাধ্যমে পৃথক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এরপর নির্ধারিত সময়ে ভোটারের ঠিকানায় তিন খামের ভেতর ব্যালট পাঠানো হবে। একটি খামের ভেতরে থাকবে ব্যালট পেপার, আরেকটিতে আসন নম্বর ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। ভোটার ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় খামে ভরে নিকটস্থ পোস্ট বক্সে জমা দিলেই ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

আরেক ধাপে বলা হয়েছে, খাম পাওয়ার পর ভোটারকে অ্যাপে লগইন করে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে, নিজের ছবি তুলতে হবে এবং খামের ওপর থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে। এতে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর আসনের সব প্রার্থীর নাম দেখা যাবে। এরপর খাম খুলে ব্যালটে ভোট দিয়ে একটি ঘোষণাপত্রে সই করতে হবে। ব্যালট খামে ভরে তা নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দিলেই ভোট সম্পন্ন হবে।

Editor and Publisher Rajib Khan Executive Editor Arash Khan News Editor Monirul Islam Active Editor Jibon Islam Chief Advisor Barrister Amirul Islam Office address Published from Skyview Trade Valley, 14th Floor, 66 V.I.P Road, Nayapaltan, Dhaka-1000 and printed from Shariatpur Printing Press, 28/B, Toynbee Circular Road, Motijheel, Dhaka. Email dainikamarsadhinbangladesh@gmail.com

প্রিন্ট করুন